বাঁকখালী নদীর দুপাড়ের ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের বাগান বা প্যারাবনকে ঘিরে গড়ে ওঠতে পারে পরিবেশ বান্ধব পর্যটন কেন্দ্র। ইতোমধ্যে এবিষয়ে চিন্তা–ভাবনা শুরু করেছে নবগঠিত কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্টদের মতে, বাঁকখালী নদীতীরের উদ্ভিদরাজিকে কাজে লাগিয়ে এখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হলে একদিকে সুপার পিক সিজনে বাড়তি পর্যটকদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা সৃষ্টি হবে, অন্যদিকে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে যুক্ত হবে বিনোদনের নতুন ক্ষেত্রে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কক্সবাজার শহরের কস্তুরাঘাট থেকে সোনাদিয়া চ্যানেল পর্যন্ত বাঁকখালী নদীর দুই তীরে ঘন প্যারাবন রয়েছে। প্যারাবনের গাছগুলোর বয়সও ৯ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত হয়েছে। আর এই প্যারাবনের মোটামুটি বড় আকারের বৃক্ষগুলোতে পরিবেশ বান্ধব ঘর তৈরী করে সেখানে রেস্তোরাঁ, এমনকি ইকো কটেজ পর্যন্ত গড়ে তোলা যেতে পারে বলে মনে করেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে এখানে ইকো কটেজ ও রেস্তোরাঁ তৈরী করা হলে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে যুক্ত হবে নতুন মাত্রা। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্নস্থানে নদীতীরকে কেন্দ্র করে জনপ্রিয় বহু পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠেছে। আর এসব পর্যটন কেন্দ্র থেকে আয় করছে বিরাট অংকের রাজস্ব।
কক্সবাজারের এ সম্ভাবনাকেও কাজে লাগানো হলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে বলে মনে করেন ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টোয়াক বাংলাদেশ) এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এসএম কিবরিয়া খান। তিনি বলেন– নেপালসহ পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই সমুদ্র নেই। আছে পাহাড় ও নদী। আর সেসব পাহাড় ও নদীকে ঘিরে সেখানে গড়ে ওঠছে পর্যটন কেন্দ্র। আর এসব পর্যটন কেন্দ্রে ভীড় জমাচ্ছে দেশী–বিদেশী লাখ লাখ পর্যটক।
কক্সবাজারেও এই ধরনের ইকো ট্যুরিজমের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।আর এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতেই কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) বাঁকখালী নদীর দুই তীরকে কেন্দ্র করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার চিন্তা–ভাবনা করছে বলে জানান কউক চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট কর্ণেল (অব🙂 ফোরকান আহমদ। তিনি জানান– বাঁকখালী নদীর কোন কোন স্থানে এই ধরনের পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা যেতে পারে সে বিষয়টি নির্ধারণ করতে তিনি গত সপ্তাহে বাংলাবাজার থেকে নূনিয়াচড়া পর্যন্ত নদী তীর পরিদর্শন করেছেন। বর্তমানে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করা হচ্ছে। বাঁকখালী নদীর প্যারাবনকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার একটি পরিকল্পনা পরিবেশ অধিদপ্তরেরও রয়েছে বলে জানান কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সর্দার শরীফুল ইসলাম। তিনি বলেন– উপকূলীয় বনবিভাগের মালিকানাধীন এসব প্যারাবনকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য উত্তর নূনিয়াচড়ায় ইতোমধ্যে একটি টাওয়ার বা পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে, যেখান থেকে বনের পাখিসহ অন্যান্য প্রাণীর বিচরণের দৃশ্য উপভোগ করা যায়। তিনি জানান– চলতি বছরের জুনের মধ্যে এই কেন্দ্রের জন্য বাইনোকুলার ও দুটি নৌকা প্রদান করা হবে। ধীরে ধীরে এই পর্যটন কেন্দ্র সম্প্রসারণ করা হবে। তিনি বনকে কাজে লাগিয়ে ভূটানে গড়ে ওঠা পর্যটন কেন্দ্রের উদাহরণ টেনে বলেন– এবিষয়ে কক্সবাজারেরও বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।
পাঠকের মতামত: